top of page
rokkhok.png
19 rokkhok.png

গল্পঃ মিলু আমান
অধ্যায় ৫ – রক্ষক

প্রলয়ংকরী যুদ্ধে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত পৃথিবীর মানুষের দিকনির্দেশনা দিতে মহাজাগতিক শক্তি একদল রক্ষক প্রেরণ করে, পৃথিবীর প্রকৃতি আর মানুষের পুণর্বাসনের জন্য, পৃথিবীবাসীদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য। জীবনবৃক্ষ রক্ষা করার পাশাপাশি এই পৃথিবীকে তার চিরাচরিত শান্তিময় রূপ ফিরিয়ে দেয়াই ছিল তাদের মূল দায়িত্ব।

অপরদিকে,আজরা আকাশের পথে চলে যাবার পর থেকে রবিন নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কুড়িয়ে পাওয়া ছেলেটাকে আর মেয়েটিকে নিয়ে ও ফিরে যায় সেই পরিত্যক্ত মহাকাশ কেন্দ্রে। সেখানেই গড়ে তোলে তার নতুন আবাস। ওদের সাথে যোগ দেয় রবিনের সাইবার সেনারা আর আজরার গেরিলা বাহিনীর নেতৃত্বের একটা অংশ। মহাকাশ কেন্দ্রটাকে ওরা আবারো ঝকঝকে করে তোলে। এটাই ওদের নতুন হেডকোয়ার্টার এখন।

কিন্তু রবিনের মনের গভীরে এখনও আজরা বাস করে, ২৪ ঘন্টাই তার উপস্থিতি রবিন অনুভব করে! আর, অনুভব করে এক অসহ্য, অব্যক্ত টানাপোড়েনের যন্ত্রণা, আর প্রচন্ড অপরাধবোধ। সে স্যাটেলাইট কন্ট্রোল রুমের উপরের চূড়ায় একাকী কাটায় দিনের একটা বড় অংশ। ওর টীমের লীডারেরা সবাই জানে ওর মানসিক টানাপোড়েনের ব্যাপারটা। জরুরী দরকার ছাড়া কেউ ওকে ডাকেও না। সারাদিন ও নিজেকে ব্যস্ত রাখে, স্বয়ংক্রিয় নানান আধুনিক যন্ত্র আবিস্কারে। এভাবেই অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর একসময় রবিন তৈরি করে ফেলে বিশেষ ধরনের ড্রোন ক্যামেরা, যা খালি চোখে দেখা তো যাবেই না, বরং পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাডারকেও ফাঁকি দিতে সক্ষম। সেইগুলি রবিন ছড়িয়ে দেয় সারা বিশ্বময়। রবিন চাইলেই বিশ্বের যে কোন জায়গা যেকোন সময়েই মুহুর্তের মধ্যেই এসব ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে দেখতে পারে দূর দেশের মানুষ, জীবনযাত্রা, আবহাওয়ার গতিবিধি। এখনও সে সবাইকে জানায় না এই মহা-আবিষ্কারের কথা।

রবিন ছেলেমেয়ে দুটিকে নিজের সন্তানের মতই মানুষ করার চেষ্টা করে। ছেলেটার নাম ও রাখে ‘বিজয়’, আর মেয়েটার, ‘আজরা’। তারা দুজন বেশ ভাল ভাবেই সবার সাথে মিলে মিশে বেড়ে উঠছে। ওদের প্রতিদিনের সবচেয়ে প্রিয় সময় কাটে, রবিনের কাছে যখন ওরা খেলাচ্ছ্বলে নতুন নতুন প্রযুক্তির নানান কিছু শেখে।

সারাদিন নিজের গবেষনা নিয়ে অখন্ড ব্যস্ততা, বাচ্চাদের সময় দেয়া, মাঝেমাঝে তার টীমের ডাকে জরুরী ট্রাবলশ্যুটিং-এ সাড়া দেয়া – এতসবের পরও প্রচন্ড অস্বস্তিতে সারারাত ঘুমাতে পারে না রবিন , ছটফট করে বিছানায় এপাশ ওপাশ শুয়ে। এরপর উঠে যায়। রবিন এরপর সারারাত প্রার্থনা করে কাটায়। প্রার্থনা করতে করতেই দিনের শুরু হয়। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, এভাবেই কাটে ওর প্রায় নির্ঘুম জীবন!সবাই এখন রবিনকে তার গভীর দার্শনিক প্রজ্ঞা আর আধ্যাত্মিক চিন্তাচেতনার জন্য আরও অনেক বেশী সম্মান করে।

এমনি একদিন ভোরের ঠিক আগে, প্রার্থনায় মশগুল রবিনের চোখ হঠাৎ বুজে আসে। আর সে খুব অস্বস্তিকর দুঃস্বপ্ন দেখে, মানসচোখে দেখে আগুনের হলকা ঝড়ানো প্রচন্ড বাতাসের শব্দে পৃথিবীটাই কাঁপছে যেন, সমস্ত পৃথিবী জুড়ে তাণ্ডব! দেখে এক ভয়ংকর কালো ছায়া প্রবল বেগে থাবা মেলে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে এগিয়ে আসছে ক্রমশঃ, যাতে পৃথিবীর প্রাণীকূল হবে বিলীণ! বুকটা ওর ধ্বক করে ওঠে, এক ঝটকায় প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে উঠে বসে ও. কপালে দুশ্চিন্তার রেখা, রবিন ভাবতে থাকে, এই অদ্ভুত স্বপ্নের অর্থ কি!

ওদিকে মহাজাগতিক শক্তি রক্ষক মোতায়েন করেছিল পৃথিবী রক্ষার কাজে। কিন্তু এই রক্ষকরাই একটা পর্যায়ের পর ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করে হয়ে ওঠে ব্যভিচারী। তাদের উপরে দেয়া দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে তার হয়ে ওঠে স্বেচ্ছাচারী। কোন নিয়মের বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে তারা মানবকূলের সাথে যৌনমিলন ঘটায়, ধর্ষনেও পিছপা হয়না। এভাবে একসময় জন্ম নিতে শুরু করে নতুন এক দানব প্রজাতির! তারা রক্ষক, মানুষ এমনকি একে অপরকেও হত্যা করে, ভক্ষণ করে মৃতদের শরীর! রবিনের ড্রোন সারভেইল্যান্সেও এইসব ধরা পরে। রবিন ভাবে কিছু একটা করা দরকার।

মহাজাগতিক পরম শক্তি যাদের উপর মানবজাতিকে রক্ষা করার দায়িত্ব দিয়েছিল, তারাই আবার মানুষের ধ্বংসের সূচনা করে। এমন অবস্থায়, ঈশ্বর ক্রোধান্বিত হয়ে রক্ষকদের কঠিন শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেন। পৃথিবীর কেন্দ্রে অন্ধকার গহবরে রক্ষকদের নিক্ষেপ করে, সেখানে শিকলবন্দী করে রাখেন। সত্তর প্রজন্ম তারা সেখানে আটক থেকে শাস্তি ভোগ করবে, জ্বলবে পুড়বে নরকের আগুনে।

এরও বেশ কিছুদিন পরের কথা।সময়টা ভোরের আগের, তখনো নিকষ কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ। রবিন সেদিনও প্রার্থনায় বসে, দু’চোখ বন্ধ ধ্যানমগ্ন। হঠাৎ সে এক মুহুর্তের জন্য আবারও দেখতে পায় সেই বিশাল অপার্থিব শক্তিকে, কিন্তু এবার তা অনেক স্পষ্ট। দেখে এক মহাপ্লাবণের রুপ নিয়ে আকাশ-সমান ঢেউ প্রচন্ড বেগে ক্রমেই এগিয়ে আসছে। কালো আকাশ, আগুনের হলকা, ভয়ানক ঝড়-বৃষ্টি আর মহাবন্যায় ক্রমশঃ তলিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব!

রবিন ধড়মড় করে উঠে। স্যাটেলাইট রুমে গিয়ে এক্সট্রীম-সারভেইল্যান্স মোড অন করতেই দেখতে পায় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা এক অবিশ্বাস্য ঝড়-বৃষ্টিতে ঢাকা পড়েছে। তুষারাচ্ছন্ন পৃথিবীর সব পর্বত থেকে হিমবাহ পানি হয়ে নেমে আসছে সাগরে, ক্রমেই বাড়ছে পানি আর ঢেউ। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে প্রলয়ংকরী বন্যা, কোথাও সুনামীর পূর্বাভাস! সিসমোগ্যাফের রিডিং বলছে সব মহাসাগরের নীচে টেকটোনিক প্লেটে বড় কম্পনের আভাষ! রবিন তার সাথীদের ডেকে বিস্তারিত জানায়, সাবধান করে, বাকীদের জানাতে বলে। সবাইকে যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুতি নিতে বলে।

অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই অবস্থার আরও অবনতি হল। রবিনের সারভেইল্যান্সে এখন বিশ্বের প্রতিটা কর্নারে বেড়ে যাওয়া পানির রাশি ছাড়া আর প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না! যেকোন মুহুর্তে ওদেরকেও ঘিরে ফেলবে এই আকাশসম জলরাশি, বুঝতে পারছে রবিন! স্ক্রীনটা অফ করে, কি যেন একটা মনে পড়ে যায় তার। ও দৌড়ে যেয়ে ওর বুক শেলফে অবিন্যস্তভাবে কি যেন খুঁজতে থাকে! শেল্ফের এক র‍্যাকের এলোমেলো অনেক বইপত্রের পেছন থেকে পুরনো দিনের ক্যাসেট প্লেয়ারের মত ছোট একটা ডিভাইস নামিয়ে আনে। ডিভাইসটা সে নিজে বানায়নি, বহুদিন আগে, সত্যযোদ্ধারা চলে যাওয়ার সময় এটা তারা তাকে দিয়ে গিয়েছিল।

অবাক কৌতুহলী দৃষ্টিতে বিজয় আর আজরা ছুটে আসেঃ “এটা কি, বাবা?”

রবিন তাদের বলে, “এটা একটা ট্র্যান্সফর্মেশন ডিভাইস, যা পানিকে কাঁচে রূপান্তর করতে পারে।“

বিজয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেটা দিয়ে এখন কি হবে?”

রবিন ইতস্তত করে উত্তর দেয়, “আমিও ঠিক জানি না। তবে এটা জানি, আমরা পানিতে অবরুদ্ধ হতে যাচ্ছি, পৃথিবী এই ভয়ংকর বন্যায় তলিয়ে যাবে। কিছু একটা করতেই হবে আমাদের। হয়ত এই ডিভাইসের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোন সংকেত! আমাদের এখনি বেরুতে হবে!”

উত্তেজিত আজরা অনিশ্চয়তা জড়ানো কন্ঠে জানতে চায়ঃ “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি, বাবা? এই উঁচু পাহাড়ের চূড়াতেই কি বরং আমরা নিরাপদ না?”

রবিন খুব শান্ত স্বরে বলেঃ “আমরা সাগর তীরে যাব মা।“

আজরা আর বিজয় এই উত্তরে বেশ অবাক হয়! এই অঝোর ঝড়বৃষ্টির মাঝে তারা সমুদ্রে যাচ্ছে কেন? কিন্তু রবিনের ওপর তাদের অগাধ বিশ্বাস! তারা আর প্রশ্ন না করে রবিনের সাথে নির্দ্বিধায় রওয়ানা দেয়। 

Lyrics : K.H.SAZZADUL AREFEEN

প্রতিকার , প্রতিরোধ মানবতার রক্ষক

রুখে দাঁড়াবেই সকল অশুভ আয়োজন

স্বর্গ থেকে নেমে আসে রক্ষক

দেখাবে মানুষকে সঠিক পথের আলো

মানতে পারেনি রক্ষক আদেশ

ভেঙ্গে স্বর্গের সব নির্দেশ

দমাতে পারেনি ভালবাসা

জন্ম নিয়েছে মহা দানবের দল

রনাঙ্গন ছিঁড়ে খায় মানুষ পশু সব দানব

অসহায় অঙ্গ ছিঁড়ে সব লুটিয়ে রয়

রক্ষক ভেঙেছে স্বর্গের সব নির্দেশ

আটক রবে পৃথিবীর অতল কালো গহবরে

আসছে মহাপ্লাবন টিকে রবে না আর কেউ

মানুষ আর দানব নিয়ে যাবে বিশাল ঢেউ

রক্ষক ভেঙেছে স্বর্গের সব নির্দেশ

শেকলে বাধা পৃথিবীর অতলে

সত্তর প্রজন্ম আটক রবে রক্ষক

জ্বলবে পুড়বে নরকের আগুনে

Guitar solo : sazzad

bottom of page