top of page
prithibir gaan.png
15 prithibir gaan.png

গল্পঃ মিলু আমান
অধ্যায় ২ -জীবনবৃক্ষ

 

রবিন তার স্ক্রীনের দিকে একমনে তাকিয়ে আছে, তার আঙ্গুলগুলো দ্রুত চলতে থাকে। সে এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছে কিছু একটা করার। সে একজন দুর্ধর্ষ হ্যাকার, সাইবার-যুদ্ধে রোবটদের থামিয়ে ক্ষণস্থায়ী বিজয়ের সাক্ষী! শুধু তাই না, রবিন ছিল এই সাইবার-যুদ্ধের মূল স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের আর্কিটেক্ট। বিশ্বজুড়ে গোপনে ছড়িয়ে থাকা শত হাজার সাইবার- যোদ্ধা এখনও তারই পরবর্তী কমান্ডের অপেক্ষায়, কিন্তু এখন আর যেন কিছুই করতে পারছে না রবিন । নিজেকে বড় অসহায় লাগছে, ল্যাপটপটা ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েও, কি মনে করে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে। ক্রমেই বুঝতে পারে,ধীরে ধীরে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। রবিন রাগে হতাশায় অসহায়ত্বে চীৎকার করে ওঠে।

নিজেকে একটু সামলিয়ে, ল্যাপটপে কি একটা ট্র্যাকিং করে রবিন । আজরার সাথে দেখা করা তার খুব প্রয়োজন। কাছেই একটা জায়গায় আজরার লোকেশন দেখাল। এটা একটা গোপন আস্তানা, যার কথা বিপ্লবী সুপ্রীম কমান্ডের হাতেগোণা কিছু সদস্য ব্যতীত আর কেউ জানেনা। ল্যাপটপটা দ্রুত ব্যাগে ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে, অক্সিজেন মাস্কটা পরে নিয়ে সে সাম্প্রতিক এয়ার রেইডে প্রায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটা ভবনের বেসমেন্ট থেকে চুপিসারে বেড়িয়ে পরে। চোখকান খোলা রেখে খুব সাবধানে যেতে হবে।

আজরা একজন যোদ্ধা, সে একটা গেরিলা দলের কমান্ডার। আজরা আর রবিন শৈশব থেকে একসাথে বড় হয়েছে। রবিন আর আজরার বাবারা ছিল একে অপরের খুব কাছের বন্ধু এবং সহযোদ্ধা।রবিন আর আজরা কিশোর বয়সেই তাদের বাবাদের হারায়, দুজনই শহীদ হন এক যুদ্ধে! তখন থেকেই তারা দুজন একজন আরেকজনের সুখ দুঃখের সাথী। পরবর্তীতে যা ক্রমশঃ প্রেমে রূপ নেয়, তারা একে অপরকে ভালবাসে।তাদের এখন দেখা হয় কদাচিৎ, যুদ্ধের জন্য এই ত্যাগ মেনে নিতে হয়েছে, কারন জয় যে তাদের ছিনিয়ে আনতেই হবে!

রবিনের ভেতর একটা বিশ্বাস ক্রমেই বেড়ে উঠছে, তা হলঃ বহির্বিশ্বের কোন শক্তিই একমাত্র পারবে এখন এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে। অশুভ শোষকদের সৈন্যবাহিনীর হাতে সাম্প্রতিক পরাজয়ের পর তার সেই বিশ্বাস এখন একমাত্র উপায় বলেই মনে হচ্ছে। শহরের শেষ প্রান্তে, একটা প্রাচীণ পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে একটা উঁচু ইমারত। আর তার উপর বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী স্যাটেলাইট, যা দূর মহাবিশ্বে সিগন্যাল পাঠাতে সক্ষম। একসময় এই রিসার্চ ল্যাব ঘিরে সবচেয়ে সেরা মাথাগুলোর ছিল অনেক প্রাণচাঞ্চল্য, কর্মব্যস্ততা। কিন্তু এখন তা ইতিহাসের ছেঁড়া পাতার মতোই পরিত্যক্ত। রবিন ঠিক করে সেখানেই যাবে। কিন্তু পাহাড়ের গোড়ায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী, আর সেটা পার হতেই আজরার গেরিলা দলের সাহায্য তার সবচেয়ে বেশী দরকার।

আজরা রবিনের সব কথা শুনে বলে, “তাদের চেকপোস্ট আমরা গুঁড়িয়ে দিতে পারব। কিন্তু, তুমি ওই ইমারতের ভেতর ঢুকবে কি করে? অনেক বছর ধরে তা তালাবদ্ধ পরে আছে…”

রবিন তার ল্যাপটপটি দেখিয়ে বলে,”আমার সাথে এটা থাকলে যে কোন দুর্ভেদ্য লক আমি নিমেষেই হ্যাক করতে পারব। তারপর মৃদু একটা হাসি দেয় বলে, “সে নিয়ে তুমি ভেবো না”। আজরা রবিন কে জড়িয়ে ধরে বলে, “সাবধানে যেও!”

রবিন বলে, “তুমি যা করছ তা আমার কাজের থেকে হাজারগুণ বিপদজনক! তুমি সাবধানে থাকবে, নিজের দিকে খেয়াল রাখবে।”

প্ল্যানমত দিন তারিখ ক্ষণ দেখে তারা যে যার আস্তানা থেকে বেড়িয়ে পরে। সারা রাস্তায় লুকোচুরি করে তারা পাহাড়ের গোড়ায় পৌঁছায়। পুরোটা পথ আজরার গেরিলা বাহিনী রবিন কে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে এগোয়। ওরা গন্তব্যে পৌঁছায়। রবিন কে পেছনে রেখে আজরা তার দলকে সিগন্যাল দেয়, সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। চেকপোস্টের সশস্ত্র প্রহরীরা এহেন অতর্কিত গেরিলা আক্রমণে একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে পরে। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আজরা ইশারায় রবিন কে আসতে বলে। কাছাকাছি আসতেই আজরা শুধু বলে, “দৌঁড়াও”। রবিন নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে একবার পেছনে ফিরে দেখে, আজরা বজ্রের মত শক্তি নিয়ে একের পর এক শত্রু পরাস্ত করছে। গর্বে রবিনের বুক ভরে ওঠে। সে সামনে এগোয়।

পাহাড়ের চুড়ায় রিসার্চ ল্যাবের সাথেই মহাকাশ কেন্দ্র, এখন অচল, পরিত্যক্ত। মহাবিশ্বের নতুন সব দিক উন্মোচন কিংবা গঠনমূলক যে কোন গবেষণা, কোনকিছুর চাকাই এখন আর সচল নেই। বৃহত্তর মানব-কল্যাণে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে শোষকদলের কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা শুধু বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায় মডার্ণ ওয়ারফেয়ারে তাদের ধ্বংসযজ্ঞে লাভ হবে এমন আবিষ্কারে! মহাকাশ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। বিশাল ইমারতের এ মাথা থেকে ওমাথা আজ জনশূন্য, সদর-দরজা বিশেষ-কোড দ্বারা সীল করা। কিন্তু রবিনের কাছে তা তো কোন বাঁধাই নয়, সে নিজে একটা সেইফ স্পটে লুকিয়ে, খুব দ্রুত কাঁধের ব্যাগ থেকে তার ল্যাপটপ বের করে। একটু পরেই তার চেহারায় খেলে যায় বিজয়ীর হাসি, মনে মনে বললঃ ৩-২-১…

সদর দরজাটা স্লাইড করে আস্ত্র আস্তে খুলে যেতে থাকে। ইলেকট্রনিক দরজাটা খুলে গেলেই রবিন হামাগুড়ি দিয়ে মূল ভবনের মধ্যে প্রবেশ করে। প্রায় সাথেসাথেই তার পিছে দরজাটা আবার লক হয়ে যায়। একটা নিকষ কালো অন্ধকার মুহুর্তের মধ্যেই গ্রাস করে ওকে। টর্চের আলোয় ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে ও। ল্যাপটপে থাকা এই বিল্ডিং-এর থ্রী-ডি ম্যাপ অসংখ্যবার স্টাডি করার মাধ্যমে সে আগেই জেনেছে কোন ফ্লোরের কোন রুমে কি; ওর টার্গেট – স্যাটেলাইট কন্ট্রোলরুম।অজানা আশংকায় দুলতে থাকা ওর মন বলছে, কন্ট্রোল প্যানেলের যন্ত্রপাতিগুলো এখনও ঠিকঠাক আছে তো?

প্যানেলে কয়েক নজর বুলিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রবিন । স্যাটেলাইটের এনক্রীপ্টেড কোড সিকোয়েন্সগুলো ডিকোড করে তা হ্যাক করে ফেলে ও খুব দ্রুত। কিন্তু রবিনের মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছেঃ এই মুহুর্তটার জন্য অনেকদিন সে অপেক্ষা করে আছে, সম্ভাবনার সেই দুয়ার এখন তার হাতের মুঠোয়, অথচ, কি বলবে ও, ঠিক কাকে উদ্দেশ্য করেই বা সাহায্য চাইবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না যেন সে। কয়েক মুহুর্ত অপলক স্ক্রীণের দিকে চেয়ে থেকে, একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশন চালু করে। রবিন হাঁটু গেড়ে বসে, সাহায্য চাইবার পরিবর্তে অনেকটা প্রার্থনার সুরে বিড়বিড় করে বলে উঠেঃ “অন্ধকারে, এই বদ্ধ ঘরে, পৃথিবী নিয়ে লেখা আমার এই গান; শুনতে কি পাবে কেউ কোনো দিনও, মহাশূন্যের কোথাও কোনো প্রাণ, পৃথিবীর গান।“ 

Lyrics: K.H.SAZZADUL AREFEEN


ভাবতেই ভালো

লাগে পৃথিবী

আছে আগের মতই

নিয়ে রোদ বৃষ্টি ঝড়

সময় বয়ে যায়

আজ সব নীরব

আলো নিভে যায়

শিহরিত এই বাস্তব

অন্ধকারে

এই বদ্ধ ঘরে

পৃথিবী নিয়ে লেখা

আমার এই গান

শুনতে কি পাবে

কেউ কোনো দিনও

মহাশূন্যের কোথাও কোনো প্রাণ

পৃথিবীর গান।

স্মৃতির মলাট

চিড়ে একটি পাখি

আজ ডেকে ওঠে

আমি চমকে উঠি

দৃষ্টিবিভ্রম হবেই আমার

ফিরে বাইরে তাকালেই

ঝর্নার পাশে বন

Guitar solos : Sazzad, Rifat

bottom of page