

গল্পঃ মিলু আমান
অধ্যায় ৬ – মহাপ্লাবন
রক্ষকদের ভক্ষকে পরিণত হওয়া, আর দানবদের তান্ডবে একটা সময় মহাপ্লাবণ দিয়ে পৃথিবী নিঃশেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় মহাজাগতিক শক্তি। এই মহাবন্যা এমনই ভয়াবহ হবে যে, এতে মানুষ এবং দানব কোনকিছুই রেহাই পাবে না। পুরো দুনিয়াজুড়েই বিরামহীন মরণবৃষ্টি আর সব সাগর-মহাসাগরের পানি কেবল বেড়েই চলেছে।
প্রচন্ড দমকা বাতাস, সব নিয়ে যায় পারলে যেন। এর মধ্যেই রবিন, আজরা আর বিজয়কে নিয়ে অনেকটা ঊর্দ্ধ্বশ্বাসেই দৌড়ে ছুটে চলছে সাগরের দিকে ।পথে রবিন তার অনুসারী যাকেই পেয়েছে, সবাইকে তার সাথে আসতে বলে। পুরো ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই তখন বাকবিহবল, কেউই ধীরস্থিরভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কি করবে, শুধু ছুটছে এদিক সেদিক, নিরাপদ কোন আশ্রয়ের সন্ধানে। এর মাঝে রবিনের ডাক শুনে অনেকেই সাথে সাথে ওর কথা বিশ্বাস করে ওর পিছে পিছে আসতে থাকে, আর কেউ কেউ কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়েও বাকীদের দেখে রবিনের সাথে যুক্ত হয়, আবার অনেকেই ভেবে নেয়, রবিন নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে। না হয় এমন তাণ্ডবের সময় কেউ সাগরের কাছে যাওয়ার সাহস করে? তারা রবিনের কথায় কান না দিয়ে এদিক সেদিক ছুটে। এদিকে ঝড় আর প্রচন্ড গর্জনে বজ্রবৃষ্টি বেড়েই যাচ্ছে, সেইসাথে সাগরের পানিও…
বাতাসের তীব্রতা উপেক্ষা করে বিশ্বাসীদের সাথে নিয়ে রবিন এগিয়ে যেতে থাকে সাগরের দিকে। ধীরে ধীরে তারা সমুদ্রের কাছাকাছি চলে আসে। সাগর তখন ভয়ানক উত্তালরুপ ধারণ করেছে। বিশাল সব ঢেউ একের পর এক সাগরপাড়ে আছড়ে পড়ছে! তাই দেখে রবিনের দলের অনেকেই পিছিয়ে গেল, উল্টোদিকে দৌড়ে ছুটে পালাল। কিন্তু রবিন অটল, এতদূর এসে ফিরে যাবেনা। সে পিছে ফিরে তাকায়। অল্প কিছু বিশ্বাসী অনুসারী সহ সে দুই হাতে বিজয় আর আজরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সাগরের তীরের দিকে এগিয়ে যেতেই থাকে। ভারী ডিভাইসের বাক্সটা রবিনের কাঁধ থেকে চামড়ার বেল্টে ঝুলছে।
ঠিক যখন সমুদ্রের একদম কিনারে গিয়ে তারা পৌঁছাল, দেখে একটা আকাশের সমান উঁচু মহাবিশাল ঢেউ ফনা তোলা সাপের মত তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। এই বুঝি তা আছড়ে পড়বে ওদের ওপর, সবাইকে নিয়ে যাবে অতল জলের গভীরে। ঠিক তখনই রবিন সেই ছোট ডিভাইসটি বের করে সুইচ অন করে। আর ঠিক তখন অদ্ভুত কিছু একটা ঘটল! সময়টা যেন এক মুহুর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল! বাতাসের গর্জন আর কানে আসছে না কারো! আর, সেই প্রলয়ংকরী ঢেউও কাঁচের মত শক্ত হয়ে যায়, ধীরে ধীরে তা একটা কাঁচের রাস্তায় পরিণত হয়! রবিন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে সেদিকে চেয়ে রয়! বাকীরাও সম্মোহিতের মত তা দেখছে!
এবার রবিন পিছে ফিরে হাতটা তুলে ইশারা করে, সবার উদ্দেশ্যে ও বলে, “সবাই চলে এসো। তোমরা ভয় পেওনা। ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করবেন।” রবিনের কন্ঠের মধ্যে স্পিরিচুয়াল একটা কিছু ছিল, সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত ওকে অনুসরণ করতে থাকে, শুধুমাত্র ওর প্রতি পুর্ণ বিশ্বাস রেখে। রবিন সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যায় কাঁচের সেই পথ ধরে … এক অজানার উদ্দেশ্যে।
পৃথিবীর বুকে পানি কেবল বেড়েই চলল; ফলে যেখানে যত বড় পাহাড়-পর্বত থাকুক না কেন, সব একসময় ডুবে গেল। সমস্ত প্রাণীকূল বিলীন হয়ে গেল। এইভাবে পৃথিবীর সকল মানুষ আর দানব বিলীন হয়ে গেল।
এদিকে রবিন তার অনুসারীদের নিয়ে কাঁচের রাস্তা দিয়ে পার হতে থাকে। দুরে একটা উজ্জ্বল আলোর দিশা দেখা যায়, দেখে মনে হয় একটা গেইটের মত যেন। সেদিকে দ্রুত এগোতে থাকে ওরা, কাছে যেতে যেতে বুঝতে পারে সেটা আসলেই একটা প্রবেশদ্বার। সবাই একে একে সেটা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়, আর শেষ মানুষটা, রবিন, সেই গেইটের ওপাশে প্রবেশের পরমুহুর্তেই কাঁচের রাস্তাটা আবার পানি হয়ে যায়, বিশাল এক ঢেউ হয়ে কানফাটানো গর্জনে আছড়ে পড়ে সাগরের বুকে। আর তার ঠিক তার পরপরই সাগরের সমস্ত পানি উঠে আসে পৃথিবীর বুকে।সমস্ত দুনিয়ার স্থলভাগই ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকে এই মহাপ্লাবনে। কোথাও কোন সবুজের রেশ নেই আর, পুরো পৃথিবী গ্রহটাই একটা বিশাল বড় ঘন নীল বুদবুদের আকার ধারণ করে !
Lyrics-K.H.SAZZADUL AREFEEN
কান্নায়
ভীত অঝোর বৃষ্টিতে কেউ
সাথে বাড়ছে সাগরে ঢেউ
মহাপ্লাবন
এসো
আমার সাথে এসো
পেও না কেউ ভয়
আছে ঈশ্বর
অবিশ্বাসী
আঁকড়ে ধরে
দানবের হাত
ছিঁড়ে যাবে ঝড়ে
খুঁজে পাই
প্রতি পথের বাঁকে
বন্ধুদের দেহ
বাতাসের তীব্রতায়
উড়ে যায়
সকল আশ্রয়
তোমরা
ভয় পেও না
চলো এগিয়ে যাই সাগরে
মৃত্যু যদিও লেখা থাকে
বিশ্বাসীরা
আঁকড়ে ধরে
নিজেদের হাত
সারি বেঁধে
পাহাড় পর্বত তলিয়ে
উঠবে সাগর আকাশে
মরবে দানব আর মানব
সাগর তলে পৃথিবী
বিশাল এক ঢেউ
আছড়ে পড়ে
খুলে দিয়ে এক
কাঁচের পথ
বিশ্বাসীরা হেঁটে যায়
খোদার অমোঘ ইশারায়
Guitar solo : sazzad